চা-শিঙাড়া খেয়ে দিন কাটত, মুম্বইয়ের বস্তির ছেলে আজ আমেরিকার গবেষক

আমাদের প্রত্যককেই লড়াই করে বাঁচতে হয় জীবনে। লড়াই বিহীন জীবন তো আর জীবন নয়। বারবার ভেঁঙে গিয়েও যারা নিজেকে গড়ে নিতে পারে, দেওয়ার পিঠ ঠেকে যাওয়ার পরেও যারা নিরন্তর চালিয়ে যায় আপন সংগ্রাম তারাই তো আসল জীবন যোদ্ধা। জীবনের ময়দানের লড়াইটা প্রতিযোগিতার ময়দানের লড়াইয়ের থেকে কোনো অংশে কম নয়,বরং জীবনের লড়াই আরোও কঠিন। কারণ এখানে প্রতিটা বাঁকে বাঁকে রয়েছে চ্যালেঞ্জ, পিছুটান। এই পিছুটান যে কাটিয়ে উঠতে পারেন, তিনিই জিতে যান।

Bg Copy77, , চা-শিঙাড়া খেয়ে দিন কাটত, মুম্বইয়ের বস্তির ছেলে আজ আমেরিকার গবেষক

তেমনই এক লড়াকু ব্যক্তির নাম জয়কুমার (Jay Kumar)। এই ব্যক্তির লড়াইটা শুরু হয়েছিল মুম্বইয়ের কুরলা (kurla,Mumbai) বস্তি থেকে। কিন্তু সেই লড়াই সফলতা পায় তাঁর সাফল্যে। জয়কুমারের মা নলিনী। নলিনীকে শ্বশুর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। তখন অসহায় সেই মা তাঁর ছেলেকে নিয়ে আশ্রয় নেন মুম্বইয়ের কুরলা বস্তিতে। নলিনীর মা একটা চাকরি করতেন আগে। এমনকি মেয়েকে তিনি আর্থিক সাহায্য করতেন। কিন্তু ২০০৩ সালে নলিনীর অসুস্থতার ফলে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ফলে প্রবল অর্থকষ্টে ভুগতে হয় সবাইকে।

Bg Copy76, , চা-শিঙাড়া খেয়ে দিন কাটত, মুম্বইয়ের বস্তির ছেলে আজ আমেরিকার গবেষক

নলিনী বহু কষ্টে ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু অর্থের জন্য স্কুল থেকে অপমান করা হয় নলিনীকে। ছেলের স্কুলের মাইনে দিতে না পারায় স্কুল কর্তৃপক্ষ নলিনীকে জানায়, সে যেন তাঁর ছেলেকে গাড়ি চালানো শেখায়। কারণ হিসেবে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায় অর্থ না থাকলে পড়াশোনা হয় না। নলিনীর এমন দিনও গেছে যখন তিনি শিঙাড়া, বড়াপাউ খেয়ে দিন কাটিয়ে দিতেন।

He Used To Spend His Days Eating Tea Singara The Son Of The Slums Of Mumbai Is Now An American Researcher, , চা-শিঙাড়া খেয়ে দিন কাটত, মুম্বইয়ের বস্তির ছেলে আজ আমেরিকার গবেষক

কিন্তু ভাগ্যের জোরে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মেসকোর মারফত নলিনীর বাকি রাখা স্কুলের মাইনের অনেকটা পরিশোধ করে দেয়। এমনকি তাঁরা জয়কুমারকে সুদ ছাড়া কলেজে পড়ার ঋণের ব্যবস্থাও করে দেন। তবে রাজকুমারের অপরের সাহিত্য নেওয়া পছন্দ না থাকায় তিনি একটি টিভি মেরামতির দোকানে কাজ করতে শুরু করে দেন। সেখান থেকে মাসে ৪০০০ টাকা মাইনে পেতেন তিনি।এছাড়াও স্থানীয় পড়ুয়াদের টিউশন পড়াতেন। সব মিলিয়ে নিজের খরচ চালিয়ে কেজে সোমাইয়া কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ইলেকট্রিক্যাল বিভাগে স্নাতক হন তিনি।

Bg Copy79, , চা-শিঙাড়া খেয়ে দিন কাটত, মুম্বইয়ের বস্তির ছেলে আজ আমেরিকার গবেষক

কলেজে পড়াকালীন তিনি প্রথম লার্সেন অ্যান্ড টুবরো থেকে কাজের সুযোগ পান। কলেজ পাস করেই তিনি টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ (টিআইএফআর)-এ কাজ পান। সেখানে তাঁর মাইনে ছিল ৩০,০০০ টাকা। তিন বছর ধরে তিনি টাটা ইনস্টিটিউটে কাজ করেন। এরপর জয়কুমার পিএইচডি করেন। ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক মানের জার্নালে তাঁর দু’টো গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। তাঁর সেই গবেষণাপত্রগুলো ইউনিভার্সিটি অফ ভার্জিনিয়ার নজর কেড়েছিল। এখান থেকেই তাঁর জীবনে নতুন মোড় আসে।

Bg Copy78, , চা-শিঙাড়া খেয়ে দিন কাটত, মুম্বইয়ের বস্তির ছেলে আজ আমেরিকার গবেষক

এরপর মাত্র ২৪ বছর বয়সে রাজকুমার রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে ইউনিভার্সিটি অফ ভার্জিনিয়ায় যোগ দেন। এখন রাজকুমারের মাসিক স্টাইপেন্ড ২০০০ ডলার অর্থাৎ ভারতীয় হিসেবে ১ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকারও বেশি। তবে এখনও তিনি স্পাইপেন্ডের ৫০০ ডলার নিজের খরচের জন্য রাখেন। বাকিটা তিনি পাঠিয়ে দেন নিজের মাকে। জীবনে বহু প্রতিকুলতা পেরিয়ে লড়াই করে তিনি প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তবে সবসময় তাঁর পাশে ছিলেন তাঁর মা।