অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী এক অতি চর্চিত নাম। টলিউড থেকে বলিউড সর্বত্রই তাঁর জনপ্রিয়তা বিদ্যমান। ১৯৭৬ সালে তিনি অভিনয় জগতে ডেবিউ করেন। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র হল মৃণাল সেনের ‘মৃগয়া’। প্রথম ছবিতেই দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য তিনি জিতেছিলেন জাতীয় পুরস্কার। এরপর তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তার একের পর এক সিনেমা রিলিজ হতেই থাকে। বাংলায় যেমন তিনি দুর্দান্ত কাজ করেছেন পাশাপাশি বলিউডেও তাঁর বেশ পরিচিতি হয়েছে। এক ডাকে বলিউড থেকে টলিউড সকলেই তাকে চেনে। ১৯৭৯ সালে তিনি বলিউডে ডেবিউ করেন। তিনি প্রথম ফিল্মে রাজশ্রী প্রোডাকশনের সাথে কাজ করেছিলেন।
রাজশ্রী প্রোডাকশনের ‘তাড়না’ ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে তিনি বলিউডে জায়গা করে নিয়েছিলেন। তাঁর প্রতিটা ডায়লগ আজও বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েদের মুখে মুখে ঘোরে। তবে এই যে সফলতা তা কিন্তু একদিন আসেনি। অনেক পরিশ্রমের পর আজ এই দিন দেখতে পাচ্ছেন তিনি। এহেন অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী মাতৃহারা হয়েছেন। মুম্বাইয়ের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তাঁর মা শান্তিরানী দেবী। শান্তিরানী দেবীর ৫ সন্তান। সারাজীবন অনেক সংঘর্ষ করতে হয়েছে তাঁকে।
স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে জীবনের বেশিরভাগ সময়টাই তিনি কাটিয়েছিলেন কোলকাতার জোড়াবাগানের বাড়িতে। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই ছেলে মিঠুনের সাথে মুম্বাইতে থাকা শুরু করেছিলেন তিনি। মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই শোকে ভেঙে পড়েছেন মিঠুন চক্রবর্তী। তিনি বাবাকে হারিয়েছিলেন করোনা মহামারিতে। তার ক্যারিয়ারের প্রথম দিক মোটেও খুব একটা ভালো ছিল না। প্রথমদিকে টেম্পুতে করে যাতায়াত করতে হত তাকে। শ্যাম বর্ণ, অনুজ্জ্বল চেহারার ছেলেটাকে বাহারি চাকচিক্য না থাকার কারণে অনেক প্রত্যাখ্যানের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। কিন্তু এক সময় গিয়ে এই অনুজ্জ্বল চেহারায় তাঁকে সফলতা এনে দিয়েছিল।
১৯৭৬ সালে ‘মৃগয়া’ ফিল্ম থেকেই অভিনয় জীবন শুরু করেছিলেন তিনি। সেই সিনেমার পরিচালক ছিলেন মৃণাল সেন। অভিনয় করে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী। আজকের দিনে তাঁর নাম সকলেরই জানা। কেবলমাত্র টলিউডের নয়, বলিউডেও তিনি সমানভাবেই প্রিয়। তিনি আজও মৃণাল সেনকে ভোলেননি। ভীষন সম্মান করেন তাঁকে। তাঁর জন্মবার্ষিকীতে একটি ঘটনার কথা জানিয়েছেন মিঠুন চক্রবর্তী। নিজের অনুজ্জ্বল চেহারার জন্য হীনমন্যতায় ভুগতেন তিনি।
কারণ এই চেহারার কারণেই ভালো অভিনয় জানা সত্ত্বেও বারবার রিজেকশন সহ্য করতে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু ‘মৃগয়া’ সিনেমাটিতে প্রয়োজন ছিল এমনই অনুজ্জ্বল গায়ের রঙের। আর তারপর থেকেই এই যাত্রা শুরু। সেদিনকার অনুজ্জ্বল ছেলেটি আজ কে টলিউড আর বলিউড একসাথে কাঁপাচ্ছে। তাঁকে আজ সম্মানের সাথে “মিঠুন দা”, “দাদা”, “গুরু” নামে ডাকা হয়। তিনি বলিউডে ‘দো আনজানে’, ‘ফুল খিলে হে গুলশান গুলশান’ -র মতো সিনেমায় কাজ করেছিলেন। কিন্তু সেগুলি সবই ছিল পার্শ্ব চরিত্রে। ক্যারিয়ারের প্রথম দিকটা মোটেই সব ছিল না তার জন্য। এক সময় নিজের স্বপ্নকে শেষ হওয়ার র পথে যেতেও দেখেছিলেন।
এরপর ‘ডিস্কো ড্যান্সার’ মুভিটি তাকে খ্যাতির শীর্ষে এনে দেয়। মিঠুন চক্রবর্তীর অভিনয়, নৃত্য আর রোমান্টিক দিক সবই এই মুভিতে ফুটে উঠেছিল। শ্রীদেবীর সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক হয়েছিল তাঁর। শোনা যায় তাঁরা লুকিয়ে বিয়েও করেছিলেন। কিন্তু যখন শ্রীদেবী বুঝেছিলেন মিঠুন চক্রবর্তীর নিজের স্ত্রী -র সাথে বিচ্ছেদ চান না, তখন নিজেই সরে যান। এখন সিনেমার পাশাপাশি রাজনীতিতেও সক্রিয় হয়েছেন তিনি।