অনেক সময় আমরা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে নিজের লক্ষ্য থেকে সরে আসি। পরে বলে দিই নানারকম অসুবিধার কথা। কিন্তু আজ আমরা এমন একজনের কথা আপনাদের সাথে বলতে এসেছি যিনি বহু প্রতিকূলতা ও অসুবিধার মধ্যে দিয়েও নিজের লক্ষ্য পূরণ করেছেন। আমরা কথা বলছি ২৫ বছরের পিয়াসা মহলদার (Piyasha Mahaldar) সম্পর্কে।
পিয়াসা নদীয়ার শান্তিপুরের পটেশ্বরী স্ট্রিটের বাসিন্দা। তার উচ্চতা মাত্র ৩ ফুট। হাত থাকলেও সেই হাত দিয়ে তেমনভাবে কোনও কাজ করতে পারেন না। কোনরকমে শুয়ে পেন ধরে লেখেন। এইভাবেই চলছে তার পড়াশোনা। নিজে থেকে চলাফেরাও করতে পারেন না। তার শরীরে রয়েছে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা। এই প্রতিবন্ধকতা গুলোকে মেনে নিয়েই ‘ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট’ অর্থাৎ ‘নেট’ পরীক্ষায় 99.31 শতাংশ মার্কস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। বহু পরিশ্রম করে আজ তার এই জয়।
নিজের পড়াশোনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে পিয়াসা জানান স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম দেড় বছর শান্তিপুরের একটি কেজি স্কুলে পড়েছিলেন। কিন্তু সেই স্কুলে পড়াশোনার পরিবেশ না থাকায় শান্তিপুরের স্থানীয় আমড়াতলা গার্লস স্কুলে ভর্তি হন। তিনি সেখানে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। এরপর ভর্তি হন শান্তিপুরের রাধারানী নারী শিক্ষা স্কুলে। সেখানে পঞ্চম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। এরপর বাংলায় অনার্স নিয়ে ভর্তি হন শান্তিপুর কলেজে। এরপর বাংলায় এম.এ করতে ভর্তি হন কৃষ্ণনগর গভমেন্ট কলেজে। এরপর শুরু হয় তার নেট পরীক্ষার যাত্রা। এই বছর প্রথম নেট পরীক্ষায় বসেন তিনি। আর 99.31 শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। জানান নেট পাস করার কারণে এবার তিনি অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদে নিযুক্ত হতে পারবেন।
পিয়াসা আরও জানান তিনি কোনও কাজই একা করতে পারেন না। তাকে সাহায্য করেন তার বাবা-মা ও ভাই। তার বাবা উত্তম হালদার কলকাতা পুলিশে উচ্চ পদে কর্মরত। তার মা সুপ্রিয়া দেবী গৃহবধূ এবং ভাই প্রত্যুষ বিএসসি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। এই সকল প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে যে সাফল্য পিয়াসা পেয়েছেন তার ভাগীদার অবশ্যই তার বাবা-মা ও ভাই। তারা না থাকলে পিয়াসার এই পথ আরও বেশি কণ্টকময় হবে উঠত। আমরা পিয়াসার ভবিষ্যৎ সুখের হোক এই কামনাই করি।