বাংলা চলচ্চিত্র জগতে যুদ্ধ, দাঙ্গা ও মন্বন্তর এর পরে এক স্বর্ণ যুগের সূচনা হয়েছিল। সেই সময় যে সমস্ত তারকারা কাজ করছিলেন তারা অভিনয়ের পাশাপাশি গান ও নাচের মাধ্যমে দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ তারকাদেরই আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। এই সমস্ত তারকাদের মধ্যে অন্যতম হলেন কালি ব্যানার্জি (Kali Bannerjee)।
কালি ব্যানার্জীর নাম আসলেই মনে পড়ে যায় বিসর্জনের “জয় সিংহ”, বরযাত্রী চলচ্চিত্রের “গণশা”, অযান্ত্রিক এর “বিমল”, লৌহ কপাট এর “কাসীম” ও কেদার রায় নাটকের “কার ভালো” -র কথা। বাংলা সিনেমার পাশাপাশি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। বর্তমান প্রজন্ম তাকে মনে রেখেছে “ছোট বউ” সিনেমা তে অন্ধ শশুর এর চরিত্রে অভিনয় করার জন্য।
এই সব চরিত্র তিনি খুব দক্ষতার সাথে অভিনয় করতেন। কালি ব্যানার্জি একজন ভালো অভিনেতা হওয়ার পাশাপাশি ছিলেন সাম্যবাদী, দরদী, আত্মভোলা একজন মানুষ। তবে আফসোস আজও মানুষ তাকে সঠিকভাবে চিনতে পারেনি। এত বড় মানের শিল্পী হয়েও শেষ জীবনটা তাকে দুঃখ-দুর্দশার মধ্যেই কাটাতে হয়েছিল। একশোর বেশি সিনেমাতে অভিনয় করার পরেও শেষ জীবনটা তিনি প্রবল অর্থকষ্টে পড়েছিলেন বৃদ্ধাবস্থায়। তার স্ত্রীর নাম প্রীতি দেবী ও কন্যার নাম তাপসী।
এই অর্থ কষ্ট দূর করতে শেষ জীবনে তার কাছে যে সমস্ত চরিত্রের অফার এসেছিল সবকটি গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু বার্ধক্যে পৌঁছে স্মৃতিভ্রংশ ঘটেছিল তার। তাই অভিনয় চলাকালীন মাঝে মাঝে ডায়লগ ভুলে যেতেন তিনি। যে কারণে বেশ কয়েকবার অপমানিত হতে হয়েছিল তাকে। তবে তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী। কালি ব্যানার্জি কে স্মরণে রেখেই “সন্তান” ছবির স্ক্রিপ্ট লিখেছিলেন অঞ্জন চৌধুরী।
বার্ধক্যে পৌঁছেও কালি ব্যানার্জীর অভিনয় দক্ষতা এতোটুকু ম্লান হয়নি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করে গেছেন তিনি। একটি ফিল্মে নকল বৃষ্টিতে ভিজার কারণে নিউমোনিয়া হয় তার। রামকৃষ্ণ সেবা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হলেও বিশেষ কোনো লাভ হয়নি। 1993 সালের 5 জুলাই প্রয়াত হন এই অসাধারণ শিল্প।